চট্টগ্রাম কাস্টমসের নাকের ডগায় চলছে নানা অনিয়ম। এফওবি ভিত্তিক আমদানি নথিতে ফ্রেইট বা জাহাজ ভাড়া কম দেখিয়ে ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বিপুল অংকের শুল্ক। আবার ব্যাংকিং চ্যানেলকে পাশ কাটিয়ে ফ্রেইট/অর্থ বিদেশে পাঠানো হচ্ছে হুন্ডিতে। ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব।
এখানে আগে জেনে নেই, সিএফআর ও ফ্রেইট বা এফওবি সম্পর্কে। রপ্তানিকারকের কন্টেইনার বা জাহাজ ভাড়া পরিশোধের পদ্ধতিকে বলা হয় প্রিপেইড বা সিএফআর। আর আমদানিকারকের ভাড়া বহন করার ধরনকে ফ্রেইট কালেক্ট বা এফওবি বলে। পণ্যের শুল্ক নির্ণয়ে ভাড়া অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অথচ এফওবি ভিত্তিতে পণ্য আমদানিতে ঘটছে বড় কারসাজি। যা বেরিয়ে এসেছে চ্যানেল-24 এর অনুসন্ধানে।
সম্প্রতি ঢাকার ১টি প্রতিষ্ঠান চীন থেকে এফওবি-তে পণ্য আনে। যার কন্টেইনার ভাড়া ৬ হাজার ৭শ’ ডলার এবং এক্সচেঞ্জ রেট প্রায় ১১৮ টাকা হিসেবে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তবে নথিতে উল্লেখ করা হয় মাত্র ৬শ’ ডলার। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা ছিল। তবে কাস্টমসে বাড়তি দাম ধরে শুল্কায়ন করায়, সে চেষ্টা ভেস্তে যায়।
এ বিষয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কোয়ালিটি শিপিং লাইন্সের সিইও এস এম মোক্তার আহমেদ বলেন, প্রয়োজনীয় সব নথি আমরা দেখেই দিয়েছি। এখান যদি কোনো কারসাজি থেকে থাকে তবে সেটা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কাজ।
এদিকে সিঅ্যান্ডএফ আনবি লজিস্টিকস অফিসে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। নথিতে উল্লেখ করা ঠিকানায় নেই অফিসটিও। স্থানীয়রা জানান, কাস্টমসে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন তাদের নাম্বার পাওয়া যায় কিনা। তাদের দোকানও চেঞ্জ হতে পারে।
কিছু আমদানি নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অহরহ ঘটছে রাজস্ব ফাঁকির এমন অশুভ তৎপরতা। শুল্কায়নে নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ে এফওবি আর সিএফআর লেখার অসঙ্গতি খতিয়ে দেখা হয় না। আবার ফ্রেইট মিলিয়ে দেখা হয় না চালানের সঙ্গে।
চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, বিএলে ফ্রেইট কালেক্ট লেখা থাকলেও রাজস্ব ফাঁকি দিতে বিল অব এন্ট্রিতে লেখা হয় সিএফআর। অথচ ছল-চাতুরীর এসব বিষয় নাকি জানেইনা কাস্টমস।
এ বিষয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ফ্রেইট কম দেখানো হয় এমন অভিযোগ আমরা অনেকদিন থেকেই শুনে আসছি। কিন্তু এই বিষয়ে খুব বেশি উদ্যোগ গ্রহণ না হওয়ার কারণে এমন কিছু এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন বাফার সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, কোনো না কোনোভাবে এই অনিয়মগুলোর একটি চক্র গড়ে উঠেছে। কর ফাঁকি, ডলার পাচার প্রভৃতির সঙ্গে এরাই জড়িত।
এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে এরকম কোন তথ্য নেই।
নয়ছয় হয় ফ্রেইট প্রেরণেও। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা নির্দেশনা মানতে হয় রপ্তানিকারককে, থাকতে হয় এফসি অ্যাকাউন্ট। যা কারো কারো পক্ষে মানা সম্ভব হয় না। ফলে ফরওয়ার্ডারদের ১টি অংশ ফ্রেইট পাঠায় হুন্ডির মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, এফসি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে যদি হুন্ডির পরিমাণ বেড়ে থাকে তবে সেটা আমরা যাচাই করে দেখবো। যদি সেরকম কোন সমস্যা থাকে তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশয়ই এবিষয়ে সহজিকরণে ব্যবস্থা নেবে।
দেশের মোট আমদানির কম-বেশি ২০ শতাংশ হয় এফওবি ভিত্তিতে। যার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফ্রেইট বিদেশি শিপিং লাইনকে পাঠানো হচ্ছে না ব্যাংকের মাধ্যমে।