বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০০ পূর্বাহ্ন

লিটনের বাহারি লাইট এখন রাসিকের বোঝা

প্রতিনিধির / ২৪ বার
আপডেট : সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪

রাজশাহীর কল্পনা মোড় থেকে তালাইমারি সড়কের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। এই সড়কের ডিভাইডারে ২০২২ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) লাগায় ১৩০টি সড়ক বাতির পোল। প্রতিটি পোলে বাতি রয়েছে ১৩টি করে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। হিসাব কষে দেখা যায়, প্রতি ১৫ মিটার পরপরই একেকটি বাতির পোল। রাতের সৌন্দর্য্য প্রশংসিত হলেও ঊর্ধ্বমুখি সড়কবাতির এমন ব্যবহার নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্নও উঠেছে।

রাজমুকুটের আদলে তৈরি বাতি রয়েছে নগরীর আরও প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কে। এর বাইরে নগরীর প্রতিটি প্রধান সড়কেই ব্যয়বহুল সড়কবাতি রয়েছে। ১৭টি মোড় ও চত্বরে রয়েছে ১৮টি সুউচ্চ হাই মাস্ট পোল ও ফ্লাডলাইট। স্বল্প দূরত্বে সড়কবাতির পোল স্থাপন বিদ্যুৎ খরচ বাড়িয়েছে সিটি করপোরেশনের।

ফলে, যে আলোর বাহার রাতের নগরীকে আলোচনায় এনেছিল, সেই সড়ক বাতিগুলোই যেন ক্রমশ বোঝা হয়ে উঠছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের জন্য। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহারে বেড়েছে বিদ্যুৎ খরচ। এরইমধ্যে সংস্থাটির কাছে বিল বকেয়া পড়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। তার ওপর প্রতি সপ্তাহেই একেকটি পোলে তিন থেকে পাঁচটি করে বাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রেখে কম সংখ্যক বাতি জ্বালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সিটি করপোরেশন।

বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও রাসিকের প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, নেসকোর কাছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। এগুলো পরিশোধ করা শুরু হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় বাতি জ্বালানো বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সৌন্দর্যও অক্ষুণ্ন রাখা হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রকৌশল বিভাগের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। কীভাবে কম বাতি জ্বালিয়ে খরচ কমানো যায়। এছাড়া এর বিকল্প পরিকল্পনাও চাওয়া হয়েছে।

এদিকে, নগরবাসীর অভিযোগ, সৌন্দর্যবর্ধক রাজমুকুট বাতিগুলো স্থাপনের পর থেকেই ঘন ঘন নষ্ট হয়ে যাবার ঘটনা ঘটে চলেছে। বর্তমানে প্রতিটি পোলে গড়ে ৩ থেকে ৫টি করে বাতি জ্বলে না।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রায় প্রতিনিয়তই লাইট নষ্ট হচ্ছে। আবার লাগানো হচ্ছে কয়দিন পরেই সেটি পুনরায় নষ্ট হচ্ছে। এসব প্রকল্পে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এসব বাতি স্থাপনের ফাইলগুলো খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, যেসব ঠিকাদার এসব কাজ করেছে তাদের ফাইল আমাদের কাছে আছে। তাদের পারফরম্যান্স গ্যারান্টি আমাদের কাছে আছে। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সড়ক বাতি স্থাপনে দুর্নীতির অভিযোগ প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসে। তৎকালীন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিংকে সরবরাহকৃত বাতির বিপরীতে বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত পরিশোধের এই অভিযোগ এখনও দুদকের তদন্তাধীন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ