ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। পুলিশ বলছে, এই হত্যার আগে অন্তত ৬৫ রাউন্ড বুলেট নিজে নামে অভিযুক্তরা, যাতে কোনোভাবেই ঘটনার সময় গুলির সংকট না পড়ে। এছাড়া ইউটিউবে ভিডিও দেখিয়ে শুটারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বলেও জানাচ্ছে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পুলিশ এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে বন্দুকধারী হিসেবে হরিয়ানার বাসিন্দা গুরমাইল বলজিৎ সিং (২৩) এবং উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা ধর্মরাজ রাজেশ কাশ্যপ (১৯), এবং “সহ-ষড়যন্ত্রকারী” হিসেবে হরিশকুমার বালাক্রম নিসাদ (২৩) ও প্রভিন লোনকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্রের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, সিদ্দিকের হত্যার জন্য অভিযুক্তরা ৬৫টি বুলেট নিয়ে সজ্জিত ছিল। এগুলোর মধ্যে শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে ছয়টি গুলি করে বাবা সিদ্দিককে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ অভিযুক্তদের ব্যবহৃত দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ইতোমধ্যে উদ্ধার করেছে। এগুলোর মধ্যে একটি অস্ট্রিয়ান তৈরি এবং অপরটি স্থানীয়ভাবে তৈরি দেশীয় পিস্তল। এছাড়া গ্রেপ্তারের সময় বলজিৎ এবং কাশ্যপের কাছ থেকে ২৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। তদন্তকারী দল ঘটনার খুব কাছাকাছি অবস্থান থেকে একটি কালো ব্যাগও উদ্ধার করে। ব্যাগটিতে তুরস্কে তৈরি একটি সেভেন পয়েন্ট ৬২ বোরের পিস্তল এবং ৩০রাউন্ড অব্যবহৃত গুলি এবং দুটি আধার পাওয়া গেছে। আধার কার্ড দুইটি সিদ্দিক হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামী শিবকুমার গৌতম, সুমিত কুমারের নামে। তবে কার্ডই দুটিতেই শিবকুমারের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের একজন হরিশকুমার বালাক্রম নিসাদকে মোটরসাইকেল কেনার জন্য ৬০ হাজার রুপি দেয়া হয়েছিল। তা থেকে ৩২ হাজার টাকা দিয়ে তিনি একটি সেকেন্ড-হ্যান্ড মোটরসাইকেলও কিনেছিলেন। ওই মোটরসাইকেলে চড়ে অভিযুক্তরা প্রথমে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে। তাদের চিন্তা ছিল, ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেলে যেতে সময় লাগবে খুব কম, এবং খুন করে দ্রুত পালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে সন্দেহভাজনদের মধ্যে দুজন ট্র্যাফিক দুর্ঘটনার আটকে গেলে, পরিকল্পনাটি বাদ দেয়া হয়। এর পরিবর্তে, তিনজন অপরাধী অটোরিকশায় করে ঘটনাস্থলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর হত্যার পর যাতে তাদের সনাক্ত করা না যায়, সেজন্য দ্রুত তাদের পোশাকও পরিবর্তন করে নেন।
এ ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত শুভম লোনকার, লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের একজন সদস্য বলে জানা গেছে। তবে তাকে এখন পর্যন্ত আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। মুম্বাই পুলিশ লোনকারের বিরুদ্ধে একটি লুক আউট সার্কুলার (এলওসি) জারি করেছে। যদিও তিনি নেপালে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাই পালানো ঠেকাতে নেপাল সীমান্তেও তার ছবি পাঠিয়েছে পুলিশ।
এই হত্যার তিনদিন আগেও লোনকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন। এখন তাকে না পেয়ে খুনিদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার অভিযোগে তার ভাই প্রভিন লোনকারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে কর্তৃপক্ষ এখনও শুভমের সঠিক অবস্থান খুঁজে বের করতে পারেনি।
পুলিশ বলছে, ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে বন্দুক চালানো শিখেছে শুটাররা। হত্যার আগে বেশ কয়েক সপ্তাহ মুম্বাইয়ের কুরলা এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নেন তারা। সেখানেই তারা অস্ত্র লোডিং, আনলোডিং এবং পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে খোলা জায়গা না পেয়ে তারা “ড্রাই অনুশীলন” এবং আনলোড করা বন্দুক নিয়ে মহড়া দেন।
তদন্তে জানা গেছে, এ ঘটনায় অন্যতম প্রধান সন্দেহভাজন শিবকুমার গৌতম উত্তরপ্রদেশের বিয়েতে উদযাপনের সময় প্রথম গুলি চালানো থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এছাড়া তিনি কাশ্যপ এবং বলজিৎকেও বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ দেন। এই তিনজন স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করত বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, পলাতক মূল সন্দেহভাজন শুভম লোনকার গত জানুয়ারিতেও মহারাষ্ট্রের আকোলা জেলায় অস্ত্র আইনের এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখন তার কাছ থেকে দশটিরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়।