বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন

কর্ণফুলী টানেলে আয়-ব্যয়ের ঘাটতি

প্রতিনিধির / ১৩ বার
আপডেট : রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪

নদীর নিচে দেশের একমাত্র টানেল দিয়ে লক্ষ্যমাত্রার থেকে সাড়ে ১৪ হাজার কম যানবাহন চলাচল করছে। এতে প্রতিদিন আয়-ব্যয়ের ঘাটতি ২৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা। ফলে সুড়ঙ্গপথটি তৈরিতে বিদেশি ঋণের প্রথম কিস্তি প্রায় ২০০ কোটি টাকা পরিশোধ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক বাহাদুরি দেখাতে আওয়ামী সরকার টানেল বানালেও কার্যকর করার অন্য পদক্ষেপগুলো নেয়নি।

দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারের সঙ্গে নগরের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম কর্ণফুলী নদীর ওপর তৈরি করা শাহ আমানত সেতু। যেখানে দিনে গড়ে যান চলাচল করে ২৬ হাজার। টোল আদায় হয় ২৪ লাখ। যেখানে টোল আদায় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় আদায়কারীদের। টোলপ্লাজার দুইপাশে তৈরি হয় যানজটের।

অথচ বিপরীত চিত্র দেখা যায় এই সেতুটির থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নদীর নিচে তৈরি করা দেশের প্রথম টানেল। যাকে ঘিরে যোগাযোগখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, নতুন শিল্পায়ন আর নগরায়নের বড় স্বপ্ন দেখানো হয় দেশের মানুষকে।

প্রায় এক বছর আগে তৈরি করা হয় কর্ণফুলীর নিচের টানেলটি। এই এক বছরে সুড়ঙ্গপথটিতে গাড়ি চলাচলের পরিমাণ অনেকটাই কম। যা টানেলের ব্যবহারিক এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের ভাইস-প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, টানেল তো আর একদিনে তৈরি করা হয়নি। এই টানেলের পরিকল্পনা হয়েছে ১০ বছর আগে। সেদিন থেকে যদি আনোয়ারায় টাউনশিপ গড়ার পরিকল্পনা থাকতো এবং একইভাবে কয়েকটি শিল্পাঞ্চল গড়ার পরিকল্পনা নিতো তাহলে এতদিন সেগুলো কার্যক্রম শুরু হয়ে যেতো।

যোগাযোগ প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে এই ধরণের প্রজেক্ট আর কেউ করেনি। কিন্তু আমরা করেছি, এই অজ্ঞতা বড়াই করার মাধ্যমে দ্বিতীয় অজ্ঞতা দেখানো হলো। আমি মনে করি, আশেপাশের দেশ এটি বানায়নি কারণ এটি অল্প খরচে বানানো যায়। যেই জ্ঞান আমাদের নেই।

টানেলে দিনে গড়ে যান চলাচল করছে ৩ হাজার ৯২৬টি। এক বছরের মাথায় যে সংখ্যা হবার কথা ছিল ১৮ হাজার ৪৮৫। কিন্তু তা হয়নি। তাছাড়া এখন টোল আদায় হচ্ছে দিনে গড়ে ১০ লাখ ৩৯ হাজার। বিপরীতে খরচ ৩৭ লাখ টাকা। চালু হবার পর এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৯টি গাড়ি থেকে ৩৭ কোটি ৫৮ লাখ ৭৫০ টাকা টোল আদায় হলেও খরচ হয়েছে ১৩০ কোটি টাকার বেশি। অথচ ৬ হাজার ৭৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা চীনা ঋণের প্রায় ২০৩ কোটি টাকা করে ৩০ কিস্তিতে চলতি বছর থেকে পরিশোধ শুরুর কথা থাকলেও তা নিয়ে এখন যত শঙ্কার মেঘ।

অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক বলেন, টানেল অপারেটিংয়ে যে খরচ হয়ে যাচ্ছে। এর থেকে যদি রেভিনিউ আয় করতে হয় তাহলে টোলের টাকা অনেক সহনীয় করতে হবে।

এদিকে নির্মাণের আগে প্রকল্প ছাড়পত্রে যেসব পূর্বাভাস দেয়া হয় বাস্তবতার সঙ্গে এর কিছুই মেলেনি। যোগাযোগখাতের বিশেষজ্ঞের গবেষণায়ও উঠে এসেছে তা।যাতে চিহ্নিত করা হয় টানেলের অন্তত ৮টি নকশা ও পরিকল্পনা ত্রুটি। উঠে এসেছে, টানেলের সুফল পেতে দুই প্রান্তে যেসব সংযোগ সড়ক হবার কথা তা এক বছরেও আলোর মুখ না দেখার বিষয়টিও।

যোগাযোগ প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক বলেন, সাসপেনশন ব্রিজ অন্তত ২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আমাদের যেখানে লাগবে ৫০০ থেকে ৬০০ ফিটের একটি জায়গা। যেখানে খুঁটি ছাড়া ব্রিজ ঝুলে থাকবে। যেটাকে বলা হয় কেবিন স্ট্রিট বিজ্র।

ভবিষ্যতে এমন স্থাপনা তৈরিতে গবেষণাপত্রে ৫টি সুপারিশও তুলে ধরেন এই বিশেষজ্ঞ।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর বাণিজ্যিকভাবে চালু হয় কর্ণফুলী টানেল। পতেঙ্গা থেকে আনোয়ার প্রান্তে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটারের টানেলটির নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার ২৫৫ কোটি টাকার মধ্যে ৪ হাজার ১৭৭ কোটি যোগান দেয় বাংলাদেশ সরকার।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ