ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিরলেন। শুধু ফেরেননি, দাপুটে জয় ছিনিয়ে এনেছেন। ভেঙেছেন ১৩১ বছরের মার্কিন ইতিহাস। ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ও পপুলার ভোট—দুই হিসাবেই করেছেন পরাজিত। তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট।
তবে ‘বিশ্ব মোড়ল’ যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ট্রাম্প প্রত্যাবর্তন করার আগেই তাকে নিয়ে শত্রু ও মিত্র—উভয় শিবিরে ছিল শঙ্কা। এই তালিকায় আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার দেশ যেমন রয়েছে তেমনি মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আফ্রিকার দেশও রয়েছে। এর কারণটা যেমন ট্রাম্পের প্রথম দফার ‘অনিশ্চিত’ শাসনামল তেমনি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় তার বাগাড়ম্বর।
এখন কথা হলো ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কেমন হবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি। ট্রাম্প কি বিশ্ববাসীর জন্য আশীবার্দ হয়ে এলেন নাকি অভিশাপ? এই প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আগামী চার বছরজুড়ে তার গৃহীত পররাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে। এবার দেখে নেয়া যাক ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কেমন হতে চলেছে আগামীর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একবার ট্রাম্পকে ‘হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের সবচেয়ে ভালো বন্ধু’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এমনটা বলার যথেষ্ট কারণও আছে। ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের তুমুল সমালোচনা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্প মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করেন। সিরিয়ার গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের দাবিকে স্বীকৃতি দেন তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসন তথাকথিত আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের মধ্যস্থতা করে। এর মাধ্যমে ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ন্যান্সি ওকাইল বলেছেন, ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে ‘সমস্যার সমাধানে অর্থের ব্যবহারই যথেষ্ট’।
পুনর্নির্বাচিত হলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের ‘অস্ত্রের বিনিময়ে শান্তি’ নীতি ব্যর্থ হয়েছে। গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের বিধ্বংসী সামরিক অভিযানই তার প্রমাণ। এই দুই অঞ্চলে ইসরায়েলের সর্বগ্রাসী যুদ্ধ ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যকে সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
অনেকেই বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই এই সংঘাতে ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে ইসরায়েলকে নিরবচ্ছিন্ন অস্ত্র সরবরাহ ও কূটনৈতিক সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে।
ন্যান্সি বলেন, নিয়ম-নীতির বিশ্বব্যবস্থা ও মার্কিন অভ্যন্তরীণ আইনসহ আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে গেছে ও অবহেলিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ট্রাম্পের আগের শাসনামালে অনিশ্চয়তা প্রাধান্য পেয়েছিল। হোয়াইট হাউসে আরও চার বছরের অস্থিরতা গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত এখন বিস্ফোরণের অপেক্ষায় রয়েছে। তার নতুন আমলে এটির বিস্ফোরণ হতে পারে।