শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৭ অপরাহ্ন

আয়না ঘরের কারিগর ২২ কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিলের নির্দেশ

প্রতিনিধির / ২৮ বার
আপডেট : বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৪

গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাসহ ২২ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এতে শেখ হাসিনা সরকারের সময়ের প্রতাপশালী প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যটালিয়নের (র‍্যাব) কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। যাদের বেশিরভাগ আলোচিত ‘আয়নাঘর’-এর কারিগর হিসেবে অভিযুক্ত।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পর এ সিদ্ধান্তের কথা ইমিগ্রেশন কতৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে পাসপোর্ট অধিদফতর। যদিও এর আগেই বেশিরভাগ কর্মকর্তা বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে মোট ২২ জন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ১৮ নভেম্বর পাসপোর্ট অধিদফতরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির প্রাথমিক তদন্তে ঐ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। তদন্তের প্রয়োজনে বর্ণিত ব্যক্তিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে লক্ষ্যে তাদের পাসপোর্ট বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

পাসপোর্ট বাতিলের জন্য পাঠানো তালিকার বেশিরভাগ কর্মকর্তা শেখ হাসিনা সরকারের সময় সামরিক বাহিনীতে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কয়েকজন ছিলেন ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের প্রধান। বাকিরা চাকরিজীবনে গোয়েন্দা সংস্থা ও র‍্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পাসপোর্ট বাতিলের জন্য পাঠানো তালিকার এক নম্বরে রয়েছে লে. জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবরের নাম। তিনি হাসিনা সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১১ সালের ২২ জুন পর্যন্ত যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। এছাড়া তালিকায় আছেন লে. জেনারেল আকবর হোসেন, সাইফুল আবেদীন, সাইফুল আলম, আহমেদ তাবরেজ শামশ চৌধুরি, মেজর জেনারেল হামিদুল হক। যারা বিভিন্ন সময়ে ডিজিএফআই ও এনএসআই’র শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের বিরুদ্ধে আলোচিত আয়নাঘর সৃষ্টি, গুম ও ক্রসফায়ারে রাজনৈতিক বিরোধী নেতাকর্মী দমনসহ গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

তালিকায় আরও রয়েছে– মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদ, মেজর জেনারেল সুলতাউজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন, মেজর জেনারেল কবির আহমেদ, মেজর জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তানভির গনি চৌধুরি, কর্নেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান সাবেরী খান, সাবেক র‍্যাব কর্মকর্তা কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন, লে. কর্নেল কিসমত হায়াৎ, লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ, লে. কর্নেল মেহেদী হাসান, মেজর রাহাত উস সাত্তার, ওয়ারেন্ট অফিসার জিয়া উর রহমান ও ওয়ারেন্ট অফিসার ইমরুল কায়েসের নাম।

এছাড়া, ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা সাবেক পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনের পাসপোর্টও বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুজনেই চাকরীজীবনের একটি বড় সময় র‍্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নে সংযুক্ত ছিলেন। বিশেষ করে আলেপ উদ্দিন র‍্যাব-১১তে কর্মরত থাকাকালে তার বিরুদ্ধে গুম ও ক্রসফায়ারে একাধিক অভিযোগ ওঠে।

পাসপোর্ট বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো গুম কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, ‘অত্র কমিশনের কার্যক্রম ফলপ্রসূ করার নিমিত্তে তদন্ত চলাকালে উক্ত ব্যক্তিদের দেশত্যাগে বিরত রাখার জন্য তাদের পাসপোর্ট বাতিল করে সকল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে অবগত করাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক। তাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ কমিশনকে অবগত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করছি। উল্লেখ্য, গত ৯ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টামণ্ডলীদের সভায় বিস্তারিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আংশিক তালিকা সংযুক্ত করে পত্র পাঠানো হলো।’

পাসপোর্ট বাতিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের বিষয়ে জানার জন্য মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) পাসপোর্ট অধিদফতরে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্টদের কেউ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে কর্মকর্তাদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট বাতিল ও প্রজ্ঞাপন জারির প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে তাদের বিদেশ যাত্রা ঠেকাতে বাতিল সংক্রান্ত তালিকা পুলিশের বিশেষ শাখা ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠানো হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Categories