১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার আইরেসের লেনোস পার্টিডোর রাজধানীতে জন্মগ্রহণ করেন ম্যারাডোনা। ২০২৪ সালের ২৫ শে নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি আজ তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।
কারো কাছে সে বিদ্রোহী, কারো কাছে খুব কাছের মানুষ, কারো কাছে তিনি ফুটবলের ঈশ্বর। তবে তাকে যেভাবেই দেখা হোক না কেন তার পরিচয় একটি নামেই সেটি দিয়াগো ম্যারাডোনা। তাকে হারানোর চার বছর আজ। গোটা বিশ্বকে চোখের পানিতে ভাসিয়ে সম্পন্ন হয় তার শেষ যাত্রা। তার পায়ের জাদুতে বুদ হয়ে থাকত পুরো বিশ্ব লানুসের এই ম্যারাডোনাই বিশ্বকে মোহিত করেছেন মানবিক আচরণ দিয়ে, কখনো আবার ফুটবলের সাহায্যে। তবে কখনো বিতরকের কারণে ছিলেন সবার চর্চায়। মূলত তিনি ছিলেন ফুটবলের মানুষ। তিন কন্যা সন্তানের পর তিনি ছিলেন মা-বাবার প্রথম পুত্র সন্তান। তার ছোট দুই ভাই হুগোএবং রাউলও পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়।
১৯৮৬ বিশ্বকাপে তার অসাধারণ নৈপুণ্যে বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। সেই আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ‘হ্যান্ড অব গড গোল’ এবং শতাব্দীর সেরা গোলটি। এরপর ১৯৯০ বিশ্বকাপেও দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। এ আসরে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হন এই ফুটবল কিংবদন্তি। ফলে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরলেও স্বাভাবিক ছন্দে দেখা যায়নি ম্যারাডোনাকে। ১৯৭৭ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের পর ক্লাব ও জাতীয় দল মিলে আর্জেন্টাইন মহাতারকা ক্যারিয়ারে মোট গোল করেছেন ৩৪৬টি।
ক্যারিয়ারে কোচিংও করিয়েছেন ম্যারাডোনা। ২০০৮ সালে ছিলেন মেসিদের কোচ। সেবার নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আর্জেন্টিনা নিশ্চিত করে ২০১০ বিশ্বকাপের টিকিট। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নেয় ম্যারাডোনার দল।
মাত্র দুই দশকের পেশাদার ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনা খেলেছেন ছয়টি ক্লাবে। ষোল বছর বয়সে পা দেয়ার ঠিক দশদিন আগে নিজ শহরের ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে অভিষেক ঘটে তার, বর্তমানে যাদের হোম গ্রাউন্ডের নামকরণ হয়েছে ম্যারাডোনারই নামে।
তবে ক্লাব ক্যারিয়ারে বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলিসহ নানা ক্লাবে খেলেছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো নাপোলিকে একক কৃতিত্বে চ্যাম্পিয়ন করা। তিনি ক্লাবটির অধিনায়কত্ব গ্রহণ করে ক্লাবটিকে নিয়ে যান ইতিহাসের সফলতম পর্যায়ে।
হাসি-আনন্দে ব্যস্ত থাকা এই কিংবদন্তি এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন পরপারে। তবে এখনও তার নাম রয়েছে ভক্তদের হৃদয়ে গাঁথা।
ম্যারাডোনাকে হারানোর পর থেকে পৃথিবীতে বদল হয়েছে অনেককিছুই। আর্জেন্টিনা তিন যুগ পর বুঝে পেয়েছে বিশ্বকাপের শিরোপা। মেসি জিতেছেন ৮ম ব্যালন ডি অর। ম্যারাডোনা পৃথিবীর মায়া ছাড়লেও ফুটবল মাঠে করা তার অনবদ্য কীর্তিগুলো তাকে আজন্ম বাঁচিয়ে রাখবে ফুটবল প্রেমিদের হৃদয়ে।