মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৬ অপরাহ্ন

ঋণের টাকায় বিদেশ যাবেন কাস্টমস কর্মকর্তারা

প্রতিনিধির / ১৯৪ বার
আপডেট : শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
ঋণের টাকায় বিদেশ যাবেন কাস্টমস কর্মকর্তারা
ঋণের টাকায় বিদেশ যাবেন কাস্টমস কর্মকর্তারা

ঋণ করে ঘি খাওয়ার’ মতো অবস্থা হয়েছে কাস্টমস কর্মকর্তাদের। বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের ২০ কোটি টাকা খরচ করে তারা যাবেন বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে। বিদেশ সফরে তারা শিখবেন কীভাবে শুল্ক ও ভ্যাট আদায়ে দক্ষতা অর্জন করতে হয়।

অবশ্য দেশেও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ রাখা হচ্ছে। দেশে ব্যয় হবে ১৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সুতরাং প্রশিক্ষণ খাতে মোট ব্যয় হবে ৩৬ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। দেশ ও বিদেশে প্রশিক্ষণে এত টাকা রাখা হলেও কতজন কর্মকর্তা এতে অংশ নেবেন প্রকল্প প্রস্তাবে তা উল্লেখ করা হয়নি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ‘কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ প্রশিক্ষণে যেতে চান কর্মকর্তারা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অবশ্য সঙ্কটকালে সরকারি কর্মকর্তাদের এভাবে বিদেশ সফরে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের নানা খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় রাখা হলেও বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিও করা হয়নি। অথচ কোনো প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়ার আগে প্রথমেই ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হয়। বিদেশি ঋণের একটি প্রকল্পে এমন গা-ছাড়াভাব কাম্য নয়।

বিদেশি ঋণের প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয়ের বোঝা এই প্রকল্পেও দেখা গেছে। প্রকল্পটিতে পরামর্শক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৫ কোটি ২৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। এই ব্যয়কে অনেক বলছে পরিকল্পনা কমিশন।

যুক্তিসঙ্গত ব্যয় প্রাক্কলন করতে পিইসি সভায় আলোচনা করা হবে বলে বলছেন কর্মকর্তারা।

প্রকল্পটিতে নির্মাণকাজ ও ল্যাবের জন্য কিছু পণ্য বিদেশ থেকে আনা হবে। এ জন্য ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ধরা হয়েছে ৬৬ কোটি ৬৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা এবং ৩০ শতাংশ হারে শুল্ক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৩ কোট ৩০ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৭.১৫ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ‘কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রায় প্রতিটি খাতের অসামঞ্জস্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৬২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকার দেবে ৪০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক অর্থায়ন এক হাজর ৪৬১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত চলতি বছরের মে মাসে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) প্রথম সভায় প্রস্তাবিত প্রাক্কলিত ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণের জন্য অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে আইএমইডি, আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ, কার্যক্রম বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন হয়। এরপর জুন মাসে একটি সভা করা হয়। ব্যয় যুক্তিকরণ কমিটির সভায় ৮১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা কমানোর সুপারিশ করা হয়। এতে সরকারি অর্থায়ন কমে হচ্ছে ৩৯৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ কমে হচ্ছে এক হাজার ৭৮০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক বিভাগের প্যামস্টেক উইংয়ের যুগ্ম প্রধান আবদুর রউফ সময়ের আলোকে বলেন, ‘সঙ্কটের মুহূর্তে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ সফরে যাওয়া যাবে না। সেটা ঋণের টাকা হোক বা দেশের টাকা হোক। ঋণ নিলেও তো পরবর্তী সময়ে পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্পটির কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। যখন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হবে তখন তাদের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।’

প্রকল্পে পুনঃব্যয় খাতে (কাজে বারবার লাগতে পারে এমন সরঞ্জাম খাতে) ৫০১ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা মোট ব্যয়ের ২৬.৯২ শতাংশ। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য ১২৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। কি কি সরঞ্জাম কেনা হবে তার তালিকা প্রকল্পের ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়নি। প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্ট ইউনিটের (পিআইইউ) আসবাবপত্রের জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রয়োজনের নিরিখে আসবাবপত্রের সংখ্যা ও ধরন নির্ধারণপূর্বক ব্যয় যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা যেতে পারে।

প্রকল্পে কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনের (সিআরএমসি) জন্য ১০০টি ডেক্সটপ ও ৫০টি ল্যাপটপ এবং পিআইইউয়ের জন্য ৩০টি ডেক্সটপ ও ১০টি লাপটপ ক্রয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

ডিপিপিতে ২৫ জন কর্মকর্তা ও দুইজন কর্মচারীর প্রস্তাব করা হয়েছে, কিন্তু এতে অর্থ বিভাগের জনবল-সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ সংযুক্ত করা হয়নি। এ ছাড়া প্রকল্পে ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন খাতে ৯ ক্যাটাগরিতে ৫৩ জনকে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতেও অর্থ বিভাগের জনবল-সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ নেওয়া হয়নি।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০২২ হতে জুন ২০২৭ পর্যন্ত মোট পাঁচ বছর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি আরও কমিয়ে আনতে হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য, নির্বাচিত বন্দরগুলোতে ব্যয়দক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং সহনশীল বাণিজ্যিক অবকাঠামোর উন্নয়ন; আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও সর্বোত্তম ব্যবহারবিধি মোতাবেক আধুনিক শুল্ক পদ্ধতি গ্রহণ করে বাণিজ্যিক ব্যয় হ্রাসকরণ; বাণিজ্য সম্প্রসারণমূলক শুল্ক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং বাংলাদশের রূপকল্প-২০৪১-এর আলোকে বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নয়ন এবং শুল্ক বিভাগের মানব সম্পদ, আর্থিক এবং অবকাঠামোগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সব পর্যায়ে শুল্ক প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; যথাযথ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে কাস্টমস পরিষেবার কার্যকারিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা।

অন্যদিকে প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সরহকারী সচিব কানাই লাল শীল সময়ের আলোকে বলেন, ‘প্রকল্পের কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। তাই প্রকল্পের বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারব না। প্রকল্প শুরু হলে সব ধরনের তথ্য দিতে পারব।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ