মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৪ অপরাহ্ন

রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিনিধির / ৮৬ বার
আপডেট : শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২
রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি : প্রধানমন্ত্রী
রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিরোধীদল থেকে প্রায়ই রিজার্ভের টাকা গেল কোথায় এ নিয়ে প্রশ্ন করে। সেই সঙ্গে সারা বাংলাদেশে একটা অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করে।

রিজার্ভের টাকা নিয়ে বিরোধীদল অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি, গিলেও খায়নি আর নিয়েও যায়নি।শনিবার (১২ নভেম্বর) সকালে গণভবনে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি, গিলেও খায়নি আর নিয়েও যায়নি। তবে হ্যাঁ, বিএনপি বলবে- কারণ বিএনপির তো এটা অভ্যাস। তারা নিজেরা চুরি করে অর্থ-সম্পদ বানিয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, তাদের তো কিছুই ছিল না। জিয়াউর রহমান যখন মারা যায়, আমরা ৪০ দিন টেলিভিশনে দেখেছি, ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছু রেখে যায়নি। পরে দেখি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক তারা। জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করেই তারা এটা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে কিন্তু পয়সা কেউ তুলে নিয়ে চলে যায়নি। তাদের মনে সব সময় ওরকম ভয় থাকে, এ কথা তারা বলে। বিএনপি বিশেষ করে বলবে। বলার কারণটা হচ্ছে, তাদের নেতা তারেক জিয়া মানিলন্ডারিং কেসে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড পেয়েছে এবং সে পলাতক আসামি। কাজেই মানিলন্ডারিং যাদের অভ্যাস তারা শুধু ওইটাই জানে টাকা বোধ হয় সব নিয়ে যেতে হয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশের একটা অর্থও অপচয় করে না। প্রতিটি অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে-কল্যাণে ও তাদের ভালো-মন্দ দেখে।রিজার্ভ কমার কারণ তুলে ধরে টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, তাদের আমি বলতে চাই, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন রিজার্ভ ছিল মাত্র ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এটা বেড়েছিল মাত্র ৫ বিলিয়নের মতো। সেই জায়গা থেকে আমরা এই রিজার্ভ প্রায় ৪৮ বিলিয়নের কাছাকাছি বাড়াতে সক্ষম হই। সেটা হয়েছে এজন্য করোনা ভাইরাসের কারণে যোগাযোগ-যাতায়াত-আমদানি সবকিছু পায় বন্ধ ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, যখন যোগাযোগটা খুলে গেছে, তখন আমাদের আমদানি করা, বিশেষ করে সারা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক যে মন্দা দেখা দিয়েছে তার আঘাতটা আমাদের দেশে এসে পড়েছে।তিনি বলেন, আজকে রিজার্ভের টাকা থেকে আমাদের যেমন আমদানি ব্যয় মেটাতে হচ্ছে, পাশাপাশি আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। করোনা টেস্টিং ব্যবস্থাও বিনা পয়সায় করেছি। পৃথিবীর উন্নত কোনো দেশ বিনা পয়সায় টেস্টের ব্যবস্থা করেনি, ভ্যাকসিনও দেয়নি। আমরা নগদ টাকা দিয়ে প্রথমে ভ্যাকসিন কিনি। এরপর আমরা অনুদান পেয়েছি।

সরকারপ্রধান বলেন, খাদ্যপণ্যের দাম কিন্তু সারা বিশ্বে বেড়ে গেছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। জ্বালানি-ভোজ্যতেল, গম, ভুট্টা, ডাল- যা কিছু আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। আমরা চাল উৎপাদন করছি, খাদ্য উৎপাদন করছি। আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ, তারপরও কিছু আমাদের আমদানি করতে হয়। যখন বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ে ফসল নষ্ট হলো তখন আমাদের আমদানি করতে হয়েছে। আমরা যেটুকু খরচ করেছি সেটা হলো জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে।তিনি বলেন, জনগণের খাদ্য, ক্যানসারের ওষুধ কেনা…জনগণের মঙ্গলের জন্য আমাদের করতে হয়েছে। সার, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ আমাদের কিন্তু ক্রয় করতে হচ্ছে। নগদ টাকা দিয়ে আমরা কিনছি। তাছাড়া আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে আমরা কিন্তু বিমান কিনেছি। নদী ড্রেজিং, সেটাও আমরা নিজেদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, কিছু কিছু আমরা বিনিয়োগ করছি এই কারণে সেটা হলো, আমরা যদি অন্য দেশ থেকে লোন নিই আমাকে সুদসহ সেই ডলার পরিশোধ করতে হয়। আমাদের ডলার যদি আমরা খরচ করি, আমরা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে দিচ্ছি, তাতে করে সুদসহ টাকাটা…আমাদের দেশের টাকা দেশেই থেকে যায়। সেটাকে লক্ষ্য করে ৮ বিলিয়নের মতো আমরা খরচ করেছি। যখন শ্রীলঙ্কা খুব অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ে তাদেরও কিছু টাকা আমরা ধার দিয়েছি।দলটির সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগের একটা দায়বদ্ধতা আছে জনগণের প্রতি। কারণ জাতির পিতা যে আদর্শ দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে আমরা সেটাই পূর্ণ করতে চাই। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা রাষ্ট্র চালাচ্ছি বলেই গত ১৩ বছরে এই বাংলাদেশ বদলে গেছে।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল ও ইপিজেডকে যুক্ত করবে। এটি নির্মাণে মোট খরচ হবে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বা ১০ হাজার ২২৬ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চীনা এক্সিম ব্যাংক।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি গণভবন প্রান্তে সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস। অনুষ্ঠানে এক্সপ্রেসওয়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।অপরদিকে আশুলিয়া বাজারের কাছে প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-৩ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ, এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক লি ইউয়েন জিয়ান, ভাইস চেয়ারম্যান জো জিং জিয়াং সিএমসি ও সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল বিজনেস সেন্টারের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জো ইয়াং লিসহ কর্মকর্তারা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ