জাটকা সংরক্ষণে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ রবিবার মধ্যরাতে। তাই ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শিকারে আবারও জলের সঙ্গে জেলেদের জাল ও নৌকা নিয়ে শুরু হবে মিতালী। এরই মধ্যে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনাপাড়ের জেলেপল্লীতে মাছ ধরার উপকরণ মেরামতে ব্যস্ত জেলেরা। কারণ, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়া মাত্রই মাছ ধরতে এই জাল ও নৌকা নিয়ে জেলেদের শুরু হবে জলের সঙ্গে মিতালী।
জাটকা সংরক্ষণে দেশের ৬টি অভয়াশ্রমের মধ্যে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা অন্যতম। আর এই জাটকা সংরক্ষণেই সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। দুই মাসের সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আগামীকাল রোববার মধ্যরাতে। তাই নদীতে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। তার আগে মাছ ধরার উপকরণ জাল ও নৌকা মেরামতে ব্যস্ত এই জনপদের এমন হাজারো জেলে।চাঁদপুর জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, জাটকা সংরক্ষণে গত ১ মার্চ থেকে শুরু হয়ে আজ ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ সময় নদীতে নামতে না পারায় জেলেরা বেকার ছিলেন। তখন সরকারি তালিকায় রয়েছে, এমন প্রায় ৪০ হাজার জেলেকে ৪০ কেজি হারে মোট চার মাসে ১৬০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। তবে জেলায় পদ্মা ও মেঘনায় ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় অর্ধলক্ষ জেলে।
এদিকে, নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন বেশ কয়েকজন জেলে জানান, সাময়িকভাবে পেশা হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কিছুটা কষ্ট হলেও এখন তাদের প্রত্যাশা নদীতে মিলবে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। আর তা যদি না হয়, তাহলে তাদের পিছু ছাড়বে না দুর্ভোগ। কারণ, এরই মধ্যে ধারদেনা করে নতুনভাবে জাল ও নৌকা গড়েছেন তারা। তাছাড়া মহাজন এবং এনজিও ও সমিতি থেকে ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ তো করতেই হবে।অন্যদিকে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরায় এরই মধ্যে আটক হয়েছেন ১ হাজার জেলে, জব্দ করা হয় ২০ কোটি মিটার জাল ও ১৯ মেট্রিক টন জাটকা। জাটকা সংরক্ষণে এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল বলে দাবি নৌ-পুলিশের। এই বাহিনীর চাঁদপুর অঞ্চল প্রধান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, অন্যবারের চেয়েও এবারে অভয়াশ্রমে দায়িত্বরত অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নৌ পুলিশ বেশ তৎপর ছিল। যে কারণে যখনই জেলেরা জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে নেমেছে। তখনই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক প্রচেষ্টায় অভয়াশ্রমে জাটকা সংরক্ষণ হওয়ায় এ বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও মৎস্য বিজ্ঞানী এবং ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান।ড. আনিছুর রহমান জানান, বিগত বছর দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে এবার সময় মতো জাটকা সংরক্ষণের ফলে ইলিশের উৎপাদন সব মিলিয়ে ৬ লক্ষ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।