শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন

সাধারণ যাত্রী নিয়ে ছাড়ল স্বপ্নের মেট্রোরেল

প্রতিনিধির / ২২৭ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২
সাধারণ যাত্রী নিয়ে ছাড়ল স্বপ্নের মেট্রোরেল
সাধারণ যাত্রী নিয়ে ছাড়ল স্বপ্নের মেট্রোরেল

সাধারণ যাত্রী নিয়ে ছাড়ল স্বপ্নের মেট্রোরেল। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে সকাল ৮টায় যাত্রী নিয়ে প্রথম ট্রেন আগারগাঁওয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আর আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ীর উদ্দেশে প্রথম ট্রেনটি ছাড়ে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে। এদিকে, দেশের প্রথম মেট্রোরেলে চড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করলেন দুই যাত্রী আবদুুর রহমান ও মোমেন হোসেন।

আবদুুর রহমান বলেন, আমাদের জীবদ্দশায় মেট্রোরেল দেখে যেতে পারব সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কারণে। এ জন্য আল্লাহ আরও ৫০ বছর শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখুক। তাহলে এদেশ বিশ্ববাসীর কাছে আরও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।আবদুর রহমান আরও বলেন, বিদেশে অনেকবার মেট্রোরেলে উঠেছি। কিন্তু দেশে প্রথমবার এই ট্রেনে ভ্রমণ সত্যিই আনন্দের আর প্রাপ্তির।

মোমেন হোসেন বলেন, আমরা মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু দেখে যেতে পারলাম। শেখ হাসিনা থাকলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আরও আধুনিক অনেক কিছু দেখে যেতে পারবে। এ যেন স্বপ্ন নয়, বাস্তব।পরিবার নিয়ে আগারগাঁও থেকে উত্তরার দিয়াবাড়ী আসেন নাজমুন আরা। আধাঘণ্টা দিয়াবাড়ী ঘুরে আবার ট্রেনে উঠেছেন আগারগাঁও স্টেশনের উদ্দেশে। তিনি বলেন, ছোট্ট মেয়ে বায়না ধরেছে প্রথম দিনই মেট্রোট্রেনে চড়বে। এ জন্য সকাল সাড়ে ৬টায় আগারগাঁওয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে এক ঘণ্টা পর টিকিট কাটতে পেরেছি। পরে দিয়াবাড়ী নেমে ঘুরে আবার আগারগাঁও ফিরে যাচ্ছি। এত অল্প সময়ে যাতায়াতের এই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না।

নাজমুন আরা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক সাহসিকতার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। তিনি না থাকলে হয়তো মেট্রোরেল কী, সেটা আমরা বুঝতেই পারতাম না।অন্যদিকে, প্রথমদিনেই এই ট্রেনে চড়তে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছেন ৬৫ বছর বয়সী মো. আবদুল্লাহ। রাজধানীতে মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনে ট্রেনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

আবদুল্লাহ বলেন, রাতের গাড়িতে ঢাকা এসেছি। সকালে আগারগাঁও স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছি। শুধু এই ট্রেনে চড়ার জন্যই এসেছি।

অন্যদিকে মেট্রোরেলে চড়ে একটি বেসরকারি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম বললেন, সকালে মর্নিং ওয়ার্ক করতে বের হয়ে ট্রেনে উঠেছি। মনে হচ্ছে থাইল্যান্ডের কোনো ট্রেনে চড়ছি। তিনি থাকেন আগারগাঁওয়ের তালতলায়। বৃহস্পতিবার সকালে সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে ছাড়া মেট্রোট্রেনে চড়েছেন তিনি। মেট্রোরেলে চড়ে সাইফুল ইসলামের মতোই উচ্ছ্বসিত বহু যাত্রী। ভোর ৪টা থেকে মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন চার বন্ধু। লক্ষ্য ছিল প্রথম মেট্রোট্রেনে চড়া। ট্রেনে চড়তে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনের প্রথমে ছিলেন তারা। ট্রেনে চড়ার পর তারা জানান, মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হতে শীত উপেক্ষা করে ভোর ৪টার সময় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। ট্রেনে চড়ে খুবই ভালো লাগছে।

তবে জনগণের জন্য চলাচল উন্মুক্ত হওয়ার প্রধম দিনই ধাক্কা খেল স্বপ্নের মেট্রোরেল। কারণ, ট্রেনের টিকিট বিক্রির একটি মেশিন বিকল হয়ে গেছে। মেশিনের স্ক্রিনে দেখা গেছে, এই মেশিনটি কিছু সময়ের জন্য বিকল আছে। অনুগ্রহপূর্বক অন্য মেশিন ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হইল অথবা টিকিট অফিসে যোগাযোগ করুন লেখাটি।

প্রথমদিন সকাল থেকেই উৎসুক লোকজনের ভিড় ছিল। সময় বাড়ার সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। যাত্রীদেরও ব্যাপক ভিড় লেগে যায়। টিকিট কাউন্টারগুলোয় দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। স্বয়ংক্রিয় মেশিনের সামনেও লাইন আছে। একসঙ্গে অনেক বেশি যাত্রী টিকিট কেনার কারণে মেশিনগুলো কিছু সময় পরপর হ্যাং হতে দেখা যায়। তারপরও যাত্রীদের চাপ ব্যাপক। চাপ সামলাতে তাদের এক প্রকার হিমশিম খেতে হয়। সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে সেই লাইন আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে গিয়ে ঠেকে। হাজারের বেশি মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম দিন তাদের আর মেট্রোরেলে চড়া হয়নি। শেষে হতাশ হয়ে ফিরে যান তারা। এরই মধ্যে উত্তরা উত্তর স্টেশনে বেলা সাড়ে ১১টায় তালা লাগিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অথচ টিকিটের জন্য এখনো লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজারো যাত্রী এবং দর্শনার্থী। টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

যাত্রী এবং দর্শনার্থীদের অভিযোগ, মেট্রোরেল চড়ার জন্য উত্তরাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তারা এই স্টেশনে এসেছিলেন। কিন্তু সাড়ে ১১টা বাজতেই স্টেশনে ঢোকার সিঁড়িতে তালা লাগিয়ে দেয় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।

মেট্রোরেলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আপাতত সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলবে। পরবর্তীতে এই সময় বাড়ানো হবে। এখন মেট্রোরেল স্টেশনের ভেতর যে পরিমাণ যাত্রী আছে তাদের পরিবহন করতেই ১২টা ছাড়িয়ে যাবে।

উত্তরা উত্তর স্টেশনে ঢোকার জন্য পৃথক দুটি পথ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার সময়ই ফটক দুটির গেটে তালা লাগিয়ে দেন আনসার সদস্যরা। এ সময় বাইরে হাজারো যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা ভেতরে ঢুকতে আনসার সদস্যদের অনুরোধ করছেন। কিন্তু আনসার সদস্যরা তাতে সাড়া দেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সমালোচনা করেন যাত্রীরা।

গাজীপুর থেকে মেট্রোরেল দেখতে এসেছিলেন রাহান উদ্দিন। তিনি বলেন, বলা হয়েছে প্রাথমিকভাবে সকাল ৮টা থেলে ১২টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলবে। দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও স্টেশনের কাছে আসতে পারিনি। এর মধ্যে শুনি আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সময় শেষ।

আশকোনা থেকে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে মেট্রোরেল দেখতে এসেছিলেন সাইদ হোসেন। তিনিও মেট্রোরেলে উঠতে না পেরে হতাশা প্রকাশ করেন। বলেন, ছেলেমেয়ে মেট্রোরেলে ঘুরবে বলে তাদের নিয়ে এসেছিলাম। লাইনে দাঁড়িয়েই দেড় ঘণ্টা কেটে গেছে। এর মধ্যে ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মোহাম্মদপুর থেকে আসা সোহাগ হাসান বলেন, আমি সকাল ৮টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত আমার সামনে প্রায় ৫০ জন মানুষ আছে। আজ আর মনে হয় না উঠতে পারবো। অনেকক্ষণ যাবৎ লাইন সামনে এগোয়নি।

মিরপুর-১০ নম্বর থেকে আসা মনির হোসেন বলেন, দুই ঘণ্টার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু ভেতরে ঢোকার আগেই গেট আটকে দিয়েছে। আজকে আর যেতে পারলাম না। সময় করে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে এসেছিলাম, কিন্তু আজ আর উঠতে পারলাম না। আবার কবে সময় করে আসতে পারবো আর মেট্রোরেলে উঠতে পারবো সেটা জানি না।

মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শেরেবাংলা নগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর মহেশ চন্দ্র সিংহ বলেন, আজকের মতো মেট্রোরেল বন্ধ হয়ে গেছে। সবাইকে আগামীকাল আসতে হবে। মেট্রোরেল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলাচল করবে।

এদিকে, স্টেশনের টিকিট বিক্রয় মেশিন (টিভিএম) কেন কাজ করছে না জানতে চাইলে স্টেশন কন্ট্রোলার মো. রনি বলেন, মেশিনে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা রিকভারি করার চেষ্টা করছি। প্রথম বলেই একটু সমস্যা হচ্ছে। ঠিক হয়ে যাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ