করোনাকালের মতো কর্মীদের বেতন পরিশোধে আবারও স্বল্প সুদে ঋণ চাচ্ছেন গার্মেন্ট মালিকরা। চলতি ডিসেম্বর মাস থেকে আগামী মার্চ পর্যন্ত এই চার মাসের বেতন পরিশোধের নিশ্চয়তা চান তাঁরা। এরই মধ্যে নীতিনির্ধারণী মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেও এখনো সরকারের তরফ থেকে সেভাবে সাড়া মেলেনি।
জানা গেছে, করোনাকালে গার্মেন্ট শ্রমিকদের সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে দেওয়া পাঁচ হাজার কোটি টাকার ১৮ কিস্তির ঋণ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে পরিশোধ করা শেষ হবে। এর মধ্যেই বিজিএমইএ আবার নতুন করে এই ঋণ পুনর্নবায়ন করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। যদিও বর্তমান মন্দা সময়ে সেই ঋণ পরিশোধ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখতে চায় বিজিএমইএ।গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা, তার ধাক্কা ভালোই লেগেছে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত গার্মেন্টশিল্পে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এর সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ছোট কারখানা ও সাবকন্ট্রাকের কারখানাগুলোতে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ডেলিভারি ডিলে, পেমেন্ট ডিলে সব মিলিয়ে গার্মেন্ট খাত এখন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে গার্মেন্ট খাতকে টিকিয়ে রাখতে করোনাকালের মতো সরকার যদি আবার স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে সংকট থেকে উত্তরণে সহায়ক হবে।বিশ্বব্যাপী করোনা বিস্তারের শুরুর দিকে অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে দেশে কঠোর লকডাউন শুরু হলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে গার্মেন্টশিল্প। কয়েক দফায় লম্বা সময় পুরোপুরি বন্ধ ছিল গার্মেন্ট কারখানা। এ সময় উৎপান যেমন বন্ধ ছিল, তেমনি পোশাক রপ্তানিও নেমেছিল শূন্যের কোঠায়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার প্রণোদনার আওতায় শ্রমিকদের টানা চার মাস বেতন পরিশোধের জন্য তহবিল গঠন করে। স্বল্প সুদে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার এই তহবিল করোনার কঠিন সময়ে এ দেশের প্রধান রপ্তানি খাতকে টিকে থাকতে সহায়তা করে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২২.৯৯ বিলিয়ন ডলার। এরই মধ্যে শুধু ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪.৬৬ বিলিয়ন ডলারের। এ সময় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫.৩৬ শতাংশ। তবে এই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দিয়ে গার্মেন্ট খাতের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করা যাবে না বলে জানান বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নভেম্বর-ডিসেম্বরে রপ্তানি হওয়া পণ্যের একটি বড় অংশ ছিল ডেফার্ড (রপ্তানি স্থগিত) পণ্য। এটা রপ্তানির প্রকৃত চিত্র নয়। এই মুহূর্তে কারখানাগুলোতে যে অর্ডার আছে তা ক্যাপাসিটির চেয়ে অন্তত ৩০ শতাংশ কম।’তিনি বলেন, ‘সংকটকালে দেশের প্রধান রপ্তানি শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা সরকারের কাছে এই নীতি সহায়তা চাইব। আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসে আশা করছি বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে। সে সময় পর্যন্ত সরকার দেশের লাখ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিকের বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখতে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে উদ্যোক্তাদের পাশে থাকবে।’