রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:১৫ অপরাহ্ন

বৈদেশিক অর্থব্যয় কমার নেপথ্যে ৮৬ কারণ

প্রতিনিধির / ৬৫ বার
আপডেট : রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩
বৈদেশিক অর্থব্যয় কমার নেপথ্যে ৮৬ কারণ
বৈদেশিক অর্থব্যয় কমার নেপথ্যে ৮৬ কারণ

বছর বছর কমছে বৈদেশিক অর্থের খরচ। এ ক্ষেত্রে মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) যে লক্ষ্য ধরা হয় মাঝ পথে এসে সেটি করা হয় কাটছাঁট। কিন্তু অর্থবছর শেষে দেখা যায়, বাস্তব খরচ হচ্ছে আরও কম। এদিকে বৈদেশিক ঋণের অর্থ খরচ করতে না পারায় বাড়ছে পাইপলাইন।

এ ক্ষেত্রে কোনো কোনো ঋণে গুনতে হচ্ছে কমিটমেন্ট ফি এবং প্রতিশ্রুতি ফির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যয়ও। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমবারের মাতো ঋণের এ অর্থ ব্যয় না হওয়ার নেপথ্যে ৮৬টি কারণ খুঁজে পেয়েছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।মন্ত্রণালয়ভিত্তিক এসব কারণ তুলে ধরা হয়। শুধু তাই নয়, সমস্যাগুলো সমাধানে ‘রিসার্স সেল’ গঠনের কাজ করছে সংস্থাটি। সম্প্রতি গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি পর্যালোচনা করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

আইএমইডি সূত্র জানায়, গত পাঁচ অর্থবছরে মূল এডিপি থেকে কাটছাঁট করা হয়েছে বৈদেশিক সহায়তার ৬০ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথমে বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে বৈদেশিক অর্থ বরাদ্দ ছিল তিন লাখ ৮৩ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে কমিয়ে ধরা হয় তিন লাখ ২৩ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে আরও কম খরচ হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে আইএমইডি।

এ প্রসঙ্গে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন শনিবার বলেন, বৈদেশিক ঋণে অর্থব্যয়ের ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা আছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হয়েছে। এরপর প্রকল্প বাস্তবায়নের বাধাগুলো চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। তবে আইএমইডি কাগজকলমে শক্তিশালী মনে হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। শুধু সমস্যা তুলে ধরা আর প্রকল্প পরিদর্শন করে সুপারিশ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে আমাদের কাজ।এ অবস্থায় বর্তমানে আইএমইডিকে শক্তিশালীকরণের কাজ চলছে। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের সুপাশিগুলোর সমাধান এবং সেই সমস্যা দূর করতে সংশ্লিষ্টরা কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সেসব মনিটরিং করার উদ্যোগ থাকবে। এজন্য গঠন করা হবে ‘রিসার্স সেল’। এটি গঠনে শিগগিরই বৈঠক করা হবে। এর মধ্য দিয়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা এক ধরনের জবাবদিহিতার আওতায় আসবে।

গত অর্থবছরের আলোকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের চিহ্নিত বাধাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ২১টি।এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের ১০টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আটটি, গৃহায়ন ও গণপূর্তের চারটি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ছয়টি বাধা। আরও আছে অর্থ বিভাগের পাঁচটি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ছয়টি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের চারটি এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দুটি বাধা। তবে একটি করে বাধা চিহ্নিত হয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রকল্পের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া একটি করে বাধা রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া, পানিসম্পদ, পরিবেশ, ভূমি, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, সমাজকল্যাণ, স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা ব্যয়ের লক্ষ্য ছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা। গত মার্চ মাসের শুরুতেই সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে বরাদ্দ ছিল ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা। মাঝ পথে ১৫ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা কমিয়ে বরাদ্দ ধরা হয় ৭২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে ব্যয় হয়েছিল আরও কম অর্থাৎ ৬৭ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল বরাদ্দ ৭০ হাজার ৫০২ কোটির মধ্যে সাত হাজার ৫০১ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬৩ হাজার এক কোটি টাকা। বাস্তবে খরচ হয়েছিল ৫২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা।২০১৯-২০ অর্থবছরে মূল বরাদ্দ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা থেকে ৯ হাজার ৮০০ কোটি কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবে খরচ হয় ৪৭ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৬০ হাজার কোটি থেকে ৯ হাজার কোটি বাদ দিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫১ হাজার কোটি টাকা। বাস্তবে খরচ হয়েছিল ৪৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা।

বৈদেশিক ঋণ ব্যবহারে চিহ্নিত বাঁধাগুলোর অন্যতম কয়েকটি হলো-বৈশ্বিক মন্দার কারণে আমদানিনির্ভর সামগ্রী আমদানিতে সমস্যা হওয়ায় প্রকল্পের গতি কম হয়েছে।এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগী এক্সিম ব্যাংকের ক্রয়সংক্রান্ত ডকুমেন্ট যথাসময়ে অনুমোদন না হওয়া এবং কোভিড-১৯ এর সময় কার্যক্রম বন্ধ থাকা। আরও আছে ব্যক্তি পরামর্শক ও পরামশক ফার্ম নিয়োজিত এবং এসএমই পর্যায়ে ভেলুচেইন বিষয়ে উপযুক্ত মানসম্মত প্রার্থী না পাওয়া।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সময়মতো কাজ শুরু না করা। নির্মাণসামগ্রীর দাম অত্যধিক বৃদ্ধি। বিশ্বব্যাংক ফ্রেমওয়ার্ক প্রকল্পের প্রতিটি পর্যায়ে সংস্থাটির অনুমোদনের পর প্রকল্পের ভৌত কার্যক্রম শুরু করতে হয়। দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়া। ড্রয়িং ডিজাইন এবং মনিটরিং ফার্ম নিয়োগে বিলম্ব।প্রতিবেদনে তুল ধরা আরও কয়েকটি কারণ হচ্ছে, রেলওয়ের স্থাপনা ও নির্মাণ খাতে প্রকল্প সাহায্য অংশে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের বিপরীতে ম্যাচিং ফান্ড হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা না থাকা। ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা। পরামর্শক প্যাকেজ চুক্তির ভ্যারিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদনে দেরি।

কোভিডের কারণে আন্তর্জাতিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ সঠিক সময়ে করতে না পারা। প্রকল্পের আওতায় সঠিক সময়ে জনবল নিয়োগ দিতে না পারা। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংক্রান্ত জটিলতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থ কম ব্যয় হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ