সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে জনতা ব্যাংক শাখার গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে ব্যাংকের পিয়ন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী আওলাদ আকন্দ রঞ্জুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (১০ জুলাই) দুপুরে গোপালগঞ্জ জেলার পূর্ব মিয়াপাড়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তার রঞ্জু শাহজাদপুর পৌরসভার পাড়কোলা মহল্লার মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে।জানা যায়, গ্রেপ্তার রঞ্জু ব্যাংকের পিয়ন হলেও সে ব্যাংকের ভেতরে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসতেন এবং প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লেনদেন করলেও কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। রঞ্জু নিজেকে জনতা ব্যাংকের এমডির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের চোখের সামনে এসব অপকর্ম করতেন।
রোববার সকালে কয়েকজন গ্রাহক জনতা ব্যাংক শাখায় তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে যান। এ সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই বলে জানালে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে গ্রাহকদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এদিকে ওই খবর ছড়িয়ে পড়লে শতাধিক নারী ও পুরুষ গ্রাহক ব্যাংকে এসে ভিড় জমায় এবং টাকা ফেরতের দাবি জানিয়ে ব্যাংকের ম্যানেজার জেহাদুল ইসলামের কক্ষ ঘেরাও করে। একপর্যায়ে খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জ জনতা ব্যাংক অফিসের ডিজিএম জাহিদুল আলমের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন জেলা শাখার এসপিও আসাদুজ্জামান, পিও মনিরুজ্জামান, পিও শাহ আলম সিদ্দিকী ও আইটি শাখার সিনিয়র অফিসার ওমর ফারুক।ভুক্তভোগী গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, পিয়ন রঞ্জু গ্রাহকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে একাউন্টে টাকা জমা দেওয়া, টাকা উত্তোলন এবং নতুন একাউন্ট খোলায় সহযোগিতার কথা বলে তাদের টাকা আত্মসাৎ করেছে। পিয়ন রঞ্জুর সঙ্গে ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকতা জড়িত আছেন। একজন পিয়নের পক্ষে একাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা সম্ভব নয়।
ব্যাংক ম্যানেজার জিহাদুল ইসলাম বলেন, পিয়ন রঞ্জু ব্যাংকের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে গ্রাহকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ২৫ জন গ্রাহকের প্রায় ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।ডিজিএম জাহিদুল আলম বলেন, টাকা আত্মসাতে যদি ব্যাংকের কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- প্রায় অর্ধকোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো কামরুজ্জামান বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গোপালগঞ্জের পূর্ব মিয়াপাড়া গ্রাম থেকে সোমবার দুপুরে পিয়ন রঞ্জুকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ব্যাংকের ২০ জন গ্রাহকের একাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানিয়েছে। ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঈদের ছুটির পর থেকে পিয়ন রঞ্জু পলাতক ছিলেন।