শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৪ অপরাহ্ন

বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির একটা সীমা বেঁধে দেবে আইএমএফ

প্রতিনিধির / ৭০ বার
আপডেট : রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির একটা সীমা বেঁধে দেবে আইএমএফ
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির একটা সীমা বেঁধে দেবে আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে সরকার। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে চলতি বাজেটের চেয়ে কম ভর্তুকি বরাদ্দ রাখার পরামর্শ রয়েছে সংস্থাটির। আগামী বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির একটা সীমা বেঁধে দিতে পারে আইএমএফ। ভর্তুকি ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করতে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দলের আগামী এপ্রিলে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাবদ রাখা ১৭ হাজার কোটি টাকার প্রায় পুরোটাই শেষ হয়ে গেছে গত অর্থবছরের দেনা মেটাতে। চলতি অর্থবছরের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে যে পরিমাণ ভর্তুকি দাবি আসছে তাতে বছর শেষে তা ৫০ হাজার কোটি টাকা কিংবা তারও বেশি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে এ খাতে ভর্তুকি কমাতে হলে অধিক হারে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। এতে করে মূল্যস্ম্ফীতির চাপ আরও বাড়তে পারে।অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পিডিবি থেকে প্রতি মাসে ভর্তুকির দাবি আসছে। বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হয় তা দিয়ে চাহিদা মিটছে না। পরবর্তী বাজেটের অর্থ দিয়ে আগের বাজেটের চাহিদা মেটাতে হয়। সারা বছরের আয় ও ব্যয়ে প্রাক্কলন করেই বাজেট প্রণীত হয়। কোনো খাতে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হলে তখন বাজেট ব্যবস্থাপনায় চাপ বাড়ে।

গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এর পর নির্বাহী আদেশে গত জানুয়ারিতে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিটে গড়ে ৫ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে সরকার। আগামীতে আরও দাম বাড়ানো হবে বলেও আইএমএফকে জানানো হয়েছে।আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে গত ৩০ জানুয়ারি। ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ডলার ২ ফেব্রুয়ারি ছাড় করা হয়েছে। সংস্থাটির প্রকাশিত ‘কান্ট্রি রিপোর্টে’ জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর কথা বলেছে আইএমএফ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট আগামী জুনে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। এ বাজেট প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাজেটের জন্য নিজেদের পরামর্শ দিতে আগামী এপ্রিল মাসে আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইএমএফ বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে বললেও কোন সময়ে কী পরিমাণ কমাতে হবে তা এখনও বলেনি। তবে আগামী এপ্রিলে তাদের প্রতিনিধি দল পরবর্তী বাজেটের জন্য এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেবে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় ভর্তুকির চাহিদা কিছুটা কমতে পারে বলে তাঁরা ধারণা করছেন।এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আইএমএফের শর্ত হচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ হবে বাজারভিত্তিক। তবে এক বছরেই তা সম্ভব নয়। তাই আগামী বাজেটে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাবদ কত বরাদ্দ রাখা যাবে, তা নির্ধারণে সুপারিশ করবে আইএমএফ। তিনি বলেন, আইএমএফের ঋণ পেতে শ্রীলঙ্কা সম্প্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশেও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে না। এ ঋণ কর্মসূচি সম্পন্ন করতে হলে বাংলাদেশকেও দাম বাড়াতে হবে। তবে ধাপে ধাপে দাম বড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা ছিল, তা দিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হয়। গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসের জন্য চলতি বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তাই নতুন করে আর অর্থ দেওয়া যাচ্ছে না। তবে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলে টাকা ছাড় করা হবে।

বর্তমানে বিদ্যুতে যে পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে তার অর্ধেকই যাচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ। এর আগেও ক্যাপাসিটি চার্জ কমাতে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এদিকে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বা ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ প্রতিবছর বাড়তি খরচ হচ্ছে। আসলে যে পরিমাণ উৎপাদন ক্ষমতা ধরে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে সে পরিমাণ ক্ষমতা আছে কিনা সে বিষয়ে বিশেষ অডিট করানোর পরামর্শ দিয়ে আবারও শিগগিরই বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেবে অর্থ বিভাগ।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতে ভর্তুকি কেন বাড়ছে, যৌক্তিকভাবে বাড়ছে কিনা এ বিষয়গুলো বিশ্নেষণ করার সক্ষমতা একমাত্র বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের ছিল। কমিশন গণশুনানির মাধ্যমে এসব বিষয় উন্মুক্ত করত। কিন্তু বিইআরসিকে অকার্যকর করে দেওয়ায় এ খাতে ভর্তুকির ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ