শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২০ অপরাহ্ন

হজ নিবন্ধন কোটার ৭৩ শতাংশই খালি

প্রতিনিধির / ১১৩ বার
আপডেট : বুধবার, ১ মার্চ, ২০২৩
হজ নিবন্ধন কোটার ৭৩ শতাংশই খালি
হজ নিবন্ধন কোটার ৭৩ শতাংশই খালি

করোনা মহামারির পর এবারই বাংলাদেশ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৭ জনের পূর্ণ কোটায় হজযাত্রী পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে। তবে ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকার পরও ৭ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে হজে যাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে। ব্যয়ের ভারে মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে যাচ্ছে হজ পালনের আকাঙ্ক্ষা। ফলে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ালেও নিবন্ধনে গতি আসছে না। গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফার শেষ দিনে ৭ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে নিবন্ধনের মেয়াদ। গতকাল রাত পর্যন্ত ২১ দিনে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৩৪ হাজার ৫৯৪ জন হজযাত্রী। অর্থাৎ ২৭ শতাংশের কিছু বেশি। অর্থাৎ প্রায় ৭৩ শতাংশই খালি পড়ে আছে। নতুন নিবন্ধন যেমন হচ্ছে না, তেমনি প্রাক-নিবন্ধন বাতিলেরও হিড়িক পড়েছে। তারা তুলে নিচ্ছেন জমা দেওয়া টাকাও। এ কারণে প্রতি বছর হাজিদের নিয়ে যে ব্যস্ততা থাকে এবার তা দেখা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, করোনার আগে সর্বশেষ পূর্ণ কোটায় ২০১৯ সালে হজে গিয়েছিলেন মুসল্লিরা। তখন হজের প্যাকেজ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। ২০১৯ সালের তুলনায় ঘোষিত প্যাকেজ অনুযায়ী চলতি ২০২৩ সালে হজের ব্যয় বেড়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৫ টাকা। কোরবানির খরচ ছাড়া এ বছর হজের প্যাকেজ ধরা হয়েছে সরকারিভাবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা আর বেসরকারিভাবে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। ২০২২ সালে হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। গত বছরের হজ প্যাকেজের তুলনায় এবছর খরচ সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে।

চলতি বছর কোরবানিসহ ঐ ব্যয় ৭ লাখ ছাড়িয়ে যাবে, যা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আওতার বাইরে। হজে খরচ বাড়ার অন্যতম কারণ বিমান ভাড়া। বিশ্বের কোনো দেশেই হজের জন্য আলাদা করে বিমান ভাড়া না বাড়ালেও ২০২৩ সালে নির্ধারিত বিমান ভাড়া আগের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গত বছর বিমান ভাড়া ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর এ বছর বিমান ভাড়া ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। মূলত বিমান ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে হজের প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ টাকার সঙ্গে ডলার-রিয়ালের বিনিময় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর সৌদি সরকার হজের আনুষঙ্গিক ব্যয় কমিয়েছে।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ইত্তেফাককে বলেছেন, বিমান হাবের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ না করেই নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছে। ডলার আর রিয়ালের দাম বাড়ার অজুহাতে খরচ প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। অথচ বিমানের তেলের দাম ঐ হারে বাড়েনি। নানাবিধ সংকটের কারণে আর্থিক চাপে আছেন হজযাত্রীরা। তারা করোনার আগে যারা হজে যাওয়ার আশায় প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন তাদের বাজেটে টান পড়েছে।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বলেন, নিবন্ধনের প্রথম দিকে একটু ধীরগতি থাকে। হজযাত্রীরা টাকা দেয় দেরিতে, টাকা পেলেই এজেন্সি রেজিস্ট্রেশন করে। আশা করি কোটা পূরণ হবে। যারা প্রাক-নিবন্ধিত রয়েছেন তারা অনেকেই হজে যেতে পারবেন না। কোটার চেয়ে দ্বিগুণ প্রাক-নিবন্ধিত মানুষ রয়েছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম বলেন, নিবন্ধন একটু ধীরগতিতে হচ্ছে। আমরা আশা করছি কোটা পূরণ হয়ে যাবে। টাকা একটু বেশি, কারণ বিমান ভাড়া বেশি। অনেকে চাইলেও হয়তো যেতে পারবেন না। কিন্তু সেটি কোটা পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না।

হজ এজেন্সি আল হারামাইন ট্রাভেলসের মালিক মোহাম্মদ মুসা বলেন, এবার হজের খরচটা অনেক বেশি। এ খরচ প্রাক-নিবন্ধিত অনেকের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে, তাই তারা আর হজে যেতে পারছেন না। তিনি বলেন, আমার এজেন্সি থেকে এবার ২০০ জনের মতো প্রাক-নিবন্ধন করেছেন। এদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ১০০ জনের নিবন্ধন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। বাকিরা বলছেন, আগামী বছর যদি কমে তবে আগামী বছরের জন্য চিন্তা করেন। আর তা না হলে আমাদের ওমরাহতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

আফতাব ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের মালিক মো. আফতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিমান ভাড়া বেশি হওয়ায় মুসল্লিদের মধ্যে আগ্রহ একটু কম আছে। এজেন্সিভেদে হজযাত্রীর চাপ কমবেশি আছে। খরচ বাড়ায় আমার এজেন্সির ঠাকুরগাঁওয়ের প্রাক-নিবন্ধিত ১৯ জন হজযাত্রীর মধ্যে ১৭ জন যেতে পারবেন না। উলামা আউলিয়া হজ গ্রুপ বাংলাদেশের মালিক আহসান হাবিব জানান, তার আশা ছিল ৫০০ হজযাত্রী নিবন্ধনের। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত নিবন্ধন করাতে পেরেছেন ৫০ জনকে। আকাবা ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক আবদুল কাইউম বলেন, নিবন্ধন কিছু হয়েছে, তবে আশাব্যঞ্জক নয়। গত বছর ৫০ জন হজে পাঠাতে পারলেও এ বছর মাত্র কয়েক জন নিবন্ধন করেছেন।ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী গতকাল রাত পর্যন্ত মোট ৩৪ হাজার ৫৯৪ জন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে ৭ হাজার ৪২০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৭ হাজার ১৭৪ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এর বিপরীতে প্রাক-নিবন্ধিত রয়েছেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮ হাজার ৬৩৩ জন এবং বেসরকারিভাবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬৭ জন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৮ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ