দেশের শীর্ষ মাদক কারবারীদের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আদেশের অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে এ তালিকা দাখিল করতে বলা হয়েছে। বিচারাধীন এক রিটে সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
গত ১৩ জুন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিক এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে আবেদনটি করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দি দাস।আবেদনের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন -দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।আইনজীবী সুবীর নিন্দি দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি আবেদনের আরজি অনুযায়ী আদালত আরেকটি নির্দেশনা দিয়েছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসেছে মাদক কারবারীর মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। আদালত দুদক, সিআইডি, বিএফআইইউ, এনবিআরকে এ অভিযোগটি অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’
মাদক কারবারীর মাধ্যমে অর্থপাচারকারী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং মাদক কারবারীর মাধ্যমে অর্থ পাচারকারী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
মন্ত্রীপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন -দুদক, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট -বিএফআইইউ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড -এনবিআর ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ ১৫ বিবাদিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মাদকের কারণে প্রতি বছর দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে ৪৮১ মার্কিন মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার মত। আর মাদক কেনাবেচা করে অর্থ পাচারে বাংলাদেশের অবস্তান বিশ্বে পঞ্চম। আর এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে।গত ৮ জুন আঙ্কটাড (ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) তাদের ওয়েবসাইটে অবৈধ অর্থপ্রবাহ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। যার বরাত দিয়ে দেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিকসহ গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদকের অবৈধ অর্থপ্রবাহের দিক থেকে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে মেক্সিকো। এরপর যথাক্রমে রয়েছে কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু ও বাংলাদেশ। মাদক এবং অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনওডিসির সহায়তায় এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাদকের মাধ্যমে অবৈধ অর্থপ্রবাহের অনুমানভিত্তিক এই হিসাব করেছে আঙ্কটাড।
তালিকায় এশিয়ার যে পাঁচটি দেশের নাম রয়েছে, এর মধ্যে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের পরেই আছে মালদ্বীপ ও নেপাল। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে আফগানিস্তান ও মিয়ানমার। মূলত ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মাদকের মাধ্যমে অবৈধ অর্থপ্রবাহের এই চিত্র প্রথমবারের মতো তুলে ধরে আঙ্কটাড।