শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০৯:০০ অপরাহ্ন

রাজধানীর ১৮ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা

প্রতিনিধির / ১৫৪ বার
আপডেট : বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩
রাজধানীর ১৮ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা
রাজধানীর ১৮ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা

রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ১৮ শতাংশের বেশি বাড়িতে ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার বর্ষা মৌসুম জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে। বছরে তিনবার মশা জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রাক-বর্ষা, বর্ষা এবং বর্ষা-পরবর্তী জরিপ।

চলতি বছর ১৭ জুন থেকে গতকাল ২৭ জুন মঙ্গলবার পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমের জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে তিনটি ইনডেক্সে এডিস মশার ঘনত্ব পরীক্ষা করা হচ্ছে— ব্রুটো ইনডেক্স, হাউস ইনডেক্স ও কনটেইনার ইনডেক্স।জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণ সিটিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২৮.৭৯ শতাংশ এবং উত্তর সিটিতে ১৫.৬৯ শতাংশ। দুই সিটি মিলিয়ে ব্রুটো ইনডেক্স ২৪.৮৯ শতাংশ।হাউস ইনডেক্সে উত্তর সিটিতে ২১.৮৩ শতাংশ এবং দক্ষিণ সিটিতে ১৫.৬৯ শতাংশ মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে। এর বাইরে দুই সিটিতে মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে ভেজা পাত্র বা ওয়েট কনটেইনারে। যেমন—পানি জমে থাকা ঘর বা ভবনের মেঝে, প্লাস্টিকের ড্রাম বা প্লাস্টিকের নানা ধরনের পাত্রে লার্ভা পাওয়া গেছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের কনটেইনার ইনডেক্স ২৭.৮৭ শতাংশ আর দক্ষিণ সিটির কনটেইনার ইনডেক্স ১৯.৯৫ শতাংশ।

দুই সিটি মিলিয়ে ১৮ শতাংশের বেশি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, ১৭ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত পরিদর্শকরা রাজধানীর দুই সিটির দুই হাজার ৫১১টি বাড়ি জরিপ করেছেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বর্ষা মৌসুমের জরিপে লার্ভার উপস্থিতি ছিল ১২ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে দুই সিটিতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি ৬ শতাংশ বেড়েছে।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার গতকাল বলেন, ‘কোনো এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে।

ব্রুটো ইনডেক্স যদি ২০-এর বেশি হয় তবে তা উচ্চমাত্রার ঝুঁকি। আর হাউস ইনডেক্স যদি ১০-এর বেশি হয় তবে তা ঝুঁকিপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো নাজুক আকার ধারণ করতে পারে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে। ওই সময়টায় দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’কবিরুল বাশার বলেন, ‘বর্তমানে যেহেতু ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর ওপর আর হাউস ইনডেক্স ১০-এর ওপরে আছে, বলা যেতেই পারে—ঈদের পর ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

দেশে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো দুজন মারা গেছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরো ১৪৫ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৪৭ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এক হাজার ৪১০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ৩৯৯ জন ঢাকা বিভাগের, বাকিরা ঢাকার বাইরের।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের পরিচালিত জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে এডিস মশার লার্ভার ব্যাপক উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা গত বছরে তুলনায় বেশি। এর আগের গত পাঁচ বছরে এত বেশি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি। যেসব পাত্রে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়, সেগুলো ঘরের ভেতরের। বাসার ভেতরের এসব পাত্র পরিষ্কার রাখা প্রত্যেকের দায়িত্ব। সিটি করপোরেশনের পক্ষে সবার বাসা, বারান্দা কিংবা ছাদবাগানে যাওয়া সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘ঈদে অনেক মানুষ ঢাকার বাইরে যাবে। যে যেখানেই যাক তারা যেন নিজের ঘরে জমানো পানি ফেলে দিয়ে যায়; পানির পাত্রগুলো উল্টিয়ে রেখে যায়। কারণ তিন দিন পানি জমে থাকলে মশার ডিম থেকে লার্ভা সৃষ্টি হবে।’ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা দ্রুত বংশ বিস্তার করায় একবার লার্ভা নিধন করে ফল পাওয়া যাচ্ছে না, তাই মশার বিস্তার রোধে দক্ষিণ সিটিতে চিরুনি অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

গতকাল রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠের প্রস্তুতি দেখতে গেলে সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম তুলে ধরেন তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ