কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎস্কো বলেছেন, রাশিয়া প্রায় ৬০টি ইরানের তৈরি কামিকাজি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। যেগুলোর ৩৬টিই কিয়েভের বিভিন্ন স্থানকে নিশানা করে চালানো হয়। তবে সবগুলো ড্রোনই ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানান ভিতালি। ভূপাতিত করা ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ নিচে পড়ে পাঁচজন আহত হওয়ার খবরও জানান তিনি। তবে বিবিসি কিয়েভের মেয়রের এই দাবি যাচাই করতে পারেনি। কিয়েভের সামরিক প্রশাসন বলেছে, ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ জুলিয়ানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে পড়ায় জরুরি ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় ওডেসা অঞ্চলে হামলায় একজন নিহত হয়েছে। ইউক্রেনের রেড ক্রস বলছে, তাদের গুদামে আঘাত করেছে এই ড্রোন। ফলে গুদামে আগুন ধরে যায়। এটি কিয়েভে আট দিনের মধ্যে চতুর্থ আক্রমণ এবং রাশিয়া তাদের বিজয় দিবস উদযাপনের মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে এমন ঘটনা ঘটাল।ইউরোপের বৃহত্তম জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যেই রাশিয়া কিয়েভ এবং অন্যান্য ইউক্রেনীয় শহরগুলোর দিকে কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছে। মার্চে কিছুদিনের বিরতির পর ১০ দিন আগে রাশিয়ার বিমান হামলা শুরুর পর এদিনই তারা ঝাঁকে ঝাঁকে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালাল।
ইউক্রেনের শীর্ষ সামরিক কমান্ড বলেছে, তারা ৩৫টি ইরানের তৈরি শাহেদ ড্রোন ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, রাশিয়া কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্রও নিক্ষেপ করেছে। এতে দুর্ভাগ্যবশত মৃত ও আহত ব্যক্তিরা সবাই বেসামরিক নাগরিক। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভবন, ব্যক্তিগত বাড়ি এবং অন্যান্য বেসামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটিতে সর্বশেষ বিমান হামলা হয়েছে যখন মস্কো বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে ৯ মে বিজয় দিবস পালন করে রাশিয়ানরা। তারা রেড স্কয়ারের মধ্য দিয়ে একটি সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করে থাকে।
শহরটির প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা ইউক্রেনের শীর্ষ জেনারেলের মতে, রাশিয়া ধ্বংসপ্রাপ্ত বাখমুতে গোলাবর্ষণ তীব্র করে তুলেছে, ৯ মে ছুটির আগে দখল করার আশায়। ইউক্রেনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমান হামলার সতর্কবার্তা জারি করা হয়। খেরসনের দক্ষিণাঞ্চলে এবং দক্ষিণ-পূর্বে জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে, যেখানে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কমপ্লেক্স অবস্থিত, সেখানে বিস্ফোরণের আওয়াজ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তারা কিয়েভে অসংখ্য বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এই হামলা প্রতিহত করছে, ফলে শব্দের সৃষ্টি হয়েছে। কিয়েভের সোলোমিয়ানস্কি জেলায় বিস্ফোরণে তিনজন আহত হয়েছে এবং রাজধানীর পশ্চিমে সোভিয়াটোশিন জেলায় ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়ার সময় অন্য দুইজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো।
এই অঞ্চলের মস্কোর নিয়োগ দেওয়া গভর্নর বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে এনেরহোদার শহর, যেখানে বেশির ভাগ পারমাণবিক প্লান্টের কর্মীরা বাস করেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি কয়েক মাস ধরে রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের ঝুঁকি কমাতে প্লান্টের চারপাশে একটি সুরক্ষা জোন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। পারমাণবিক প্লান্টগুলোকে শীতল রাখার জন্য এবং দ্রবীভূতকরণ এড়াতে অবিরাম শক্তি প্রয়োজন, কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জাপোরিঝিয়া প্লান্টটি ছয়বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গভর্নর ইয়েজেনি বালিটস্কি রবিবার বলেছেন, এলাকার দুটি শহর থেকে এক হাজার ৫০০ জনেরও বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছ।
পৃথকভাবে রাশিয়ান বাহিনী রবিবার উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে আটটি স্থানে গোলাবর্ষণ করেছে বলে আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসন এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে। গত দুই সপ্তাহে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিশেষ করে ক্রিমিয়ায়ও হামলা জোরদার হয়েছে। ইউক্রেন এসব হামলার পেছনে কোনো ভূমিকা রেখেছে কি না তা নিশ্চিত না করেই বলেছে, শত্রুর অবকাঠামো ধ্বংস করে দীর্ঘ-প্রত্যাশিত স্থল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।